গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানী, জোতির্বিদ অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম আর নেই।
Published : 16 Mar 2013, 01:45 AM
শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে জীবনাবসান ঘটেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক এমিরেটাসের। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌতবিজ্ঞান ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. আবুল মনসুর চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অধ্যাপক নজরুল ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন, এছাড়া হৃদরোগও ছিল।
অধ্যাপক জামাল নজরুলের জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৪ জানুয়ারি। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন।
ড. আবুল মনসুর জানান, রোববার জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে জানাজার পর গরিবুল্লাহ শাহ মাজার কবরস্থানে প্রয়াত বিজ্ঞানীকে সমাহিত করা হবে।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌতবিজ্ঞান ও গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণা করতেন। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন তিনি।
মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চায় অবদানের জন্য ২০০১ সালে একুশে পদকে সম্মানীত করা হয় অধ্যাপক জামাল নজরুলকে। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদক পান তিনি।
১৯৯৮ সালে ইতালির আব্দুস সালাম সেন্টার ফর থিওরটিক্যাল ফিজিক্সে থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্স অনুষ্ঠানে তাকে মেডাল লেকচার পদক দেয়া হয়। ২০১১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্জাক-শামসুন আজীবন সম্মাননা পান।
জামাল নজরুলের জন্ম ঝিনাইদহ শহরে। তার বাবা তখন ওই জেলায় মুন্সেফ ছিলেন। পরে পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় বেড়ে ওঠেন তিনি।
স্কুলজীবনের শুরু কলকাতায় হলেও পরে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন তিনি, ভর্তি হন কলেজিয়েট স্কুলে। এরপর পাড়ি দেন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে। পরে আবার কলকাতায় ফিরে ভর্তি হন সেইন্ট জেভিয়ার্স কলেজে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে বিএসসি ডিগ্রি নেয়ার পর জামাল নজরুল পড়তে যান কেমব্রিজে। সেখানে প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ১৯৬৪ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি নেন তিনি। ১৯৮২ সালে পান ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রি।
তিনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অফ থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে কাজ করেন। এরপর ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পর ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনের কিংস কলেজে ফলিত গণিত পড়িয়েছেন।
১৯৭৮ সালে তিনি লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সেখানে ছিলেন তিনি।
১৯৮৪ সালে দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন অধ্যাপক নজরুল, পরে এখান থেকেই অবসরে যান তিনি।
স্কুলজীবনেই গণিতের প্রতি তার অনুরাগ জন্মে। ক্যালকুলেটর ব্যবহারে অনীহ জামাল নজরুল গণিতের জটিল হিসাব মুখেমুখে করতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন।
অধ্যাপনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠকদেরও প্রেরণা যোগাতেন জামাল নজরুল। দেশের উন্নয়ন নিয়েও ভাবনা ছিল তার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ বন্ধের উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে এক কলামে তিনি লিখেছেন- “অনেকের ধারণা, ভাল ইংরেজি না জানলে বিজ্ঞানচর্চা করা যাবে না। এটি ভুল ধারণা। মাতৃভাষায়ও ভাল বিজ্ঞান চর্চা ও উচ্চতর গবেষণা হতে পারে।”
একটি সাক্ষাৎকারেও এই বিষয়ে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেছেন তিনি।
তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘কৃষ্ণ বিবর’, ‘মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা এবং অন্যান্য প্রবন্ধ’, ‘শিল্প সাহিত্য ও সমাজ’ ।
তার দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স ১৯৮৩ সালে প্রকাশের পর বিজ্ঞানী মহলে বিশেষ সাড়া ফেলে। জাপানি, ফরাসি, পর্তুগিজ ও যুগোশ্লাভ ভাষায় তা অনুদিত হয়।
ক্লাসিক্যাল জেনারেল রিলেটিভিটি, রোটেটিং ফিল্ড্স ইন জেনারেল রিলেটিভিটি, অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু ম্যাথমেটিক্যাল কসমোলজি, স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ তার লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।